মায়াবতী পর্ব-২


"জ্বী, তায়্যেবা!"
মায়াবতী পর্ব-২
মাহিম চোখ খুললো। আসলেই নাম বললো? নাকি মনের ভুল! কোনো প্রতিবাদ না করেই নাম বলে দিলো? এইসব ভাবতে ভাবতে মাহিমের মুখ দিয়ে অজান্তেই বের হয়ে গেলো "কি?"
মেয়েটা মাহিমের দিকে তাকিয়ে বললো "তাযকিয়াতুন নূর তায়্যেবা" তারপর মৃদু হেসে আবার বই এর দিকে তাকালো। মাহিমের কানে বারবার প্রতিফলিত হচ্ছে তাযকিয়াতুন নূর তায়্যেবা আর চোখে ভাসছে সেই হাসিটা। মেয়েটা এতো অদ্ভুতভাবে কেন আকর্ষণ করছে? অচেনা একটা মেয়ের প্রতি এতো আকর্ষণ আসা ঠিক না। একদম ই ঠিক না।
মাহিম পাশে একটা চেয়ার টান দিয়ে তায়্যেবার পাশে বসলো। তারপর বললো আমি "মাহি! মানে মাহিম হক" তায়্যেবা কিছু বললো না শুধু মাহিমের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। তারপর হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বইটা নিয়ে উঠে গেলো। মাহিম ভাবছে ও কি উঠবে? আর কিছু কি জিজ্ঞাসা করবে? বেশি প্রশ্ন করলে যদি ওকে খারাপ ভাবে? সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ওর কাছে তো কিছুতেই খারাপ হওয়া যাবে না। একদম ই না।



মাহিম বাসায় যেয়ে ওর লক ডাইরিতে খুব বড় করে লিখলো তাযকিয়াতুন নূর তায়্যেবা। তারপর ভাবলো আচ্ছা কোন নামটা বেশি সুন্দর? তাযকিয়া নাকি তায়্যেবা? ধুর দুটোই তো সুন্দর। তাহলে কি নামে ডাকবে ওকে? সবাই বোধহয় তায়্যেবা ডাকে তাহলে তাযকিয়া ডাকা যায়। তারপর আবার নিজেকে ব্যঙ্গ করে বললো "মি. মাহিম! আপনার অবস্থা তো দেখছি গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেলের মতো! মেয়েটার শুধু নাম জানেন আর কিছু না। ঠিক আছে? এতোদূর না ভাবলেও চলবে। ধরেন তার বফ আছে। এতো সুন্দরী মেয়ের বফ থাকাই স্বাভাবিক। বরং না থাকাটা অস্বাভাবিক। বুঝলেন?" মাহিম আবার অন্য সত্তা সেজে জবাব দিলো "মোটেও না। ওর বফ থাকলে ওকে লাইব্রেরি থেকে নিতে আসতো না? আর বফ থাকা মেয়েগুলোর অনেক ভাব থাকে। অথচ ওর ভিতর বিন্দুমাত্র ভাব নেই। আর ওর সাথে আমার কিছু তো একটা অবশ্যই আছে নয়তো আমাকে এতো টা....."

"কিরে ভাইয়া! একা একা কার সাথে কথা বলিস?"
"তুই এখন আমার রুমে কি করিস? নক করে আসতে হয় জানিস না?"

"হুহ! বাঁদরের রুমে নাকি আবার নক করে আসবো! আসছে! কি শখ! শখ দেখলে বাঁচি না"
মাহিম ইয়ানার কান মলে দিয়ে বললো "গেলি আমার রুম থেকে? বের হ এখুনি"

"উফফ ছাড়! লাগছে। তোর রুমে থাকতে আসিনি। খেতে আয়। তোর পাবনা যাওয়ার ব্যবস্থা পরে করিস"
"পাবনা যাবো মানে?"
"সেখানেই তো সবচেয়ে নামকরা পাগলাগারদ আছে" বলেই ইয়ানা দৌড়ে বের হয়ে যায়। অন্যদিন হলে মাহিম ওর পিছু ছুটতো। তবে আজ ইচ্ছে হচ্ছে না। আজ মন আর মস্তিষ্ক দুটোতেই তায়্যেবা ছুটছে। হঠাত্ মাহিমের কিছু একটা মনে হয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এতো মুগ্ধ আর অবাক হওয়ার দরুণ মেয়েটার কন্ঠতে কতটা মধু আছে তা খেয়াল ই করা হলো না। না কালকেই গিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে
"কিরে ভাইয়া! খেতে আসবি নাকি না? ভাত নিয়ে বসে আছি তো"

"আসছি আসছি"
তারপর বিড়বিড় করে বললো "উফফ অসহ্য। একটু শান্তিমতো মায়াবতীরে নিয়ে ভাবতেও দিবে না"

মাহিমের বাজে কোনো নেশা নেই। তবে মাঝেমধ্যে দু'একটা সিগারেট খায়। না খেলেও চলে তবুও ইচ্ছা হলে খায়। আর অন্য ছেলেদের মতো মেয়ে কিংবা প্রেম করার ও নেশা নেই। এটাও অনেকটা ওর সিগারেট প্রেমের মতো। কোনো মেয়েকে সুন্দর লাগলে তাঁকে নাম জিজ্ঞাসা করবে বললে বললো না বললে নাই। তাতে ওর কিছু আসে যায় না। ওর বন্ধুরা নতুন নতুন গফ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ওকে একটু টিটকারি ও মারে তবুও ওর খারাপ লাগে না। কিন্তু সব সমীকরণ যেনো এই তায়্যেবা মেয়েটা উল্টে দিয়েছে। এর আগে চারটে মেয়ের কাছে নাম জানতে চেয়েছে। অবশ্য তিনটাই বন্ধুদের জোরাজুরিতে। নাম জানতে চাওয়ার পর ঘটে যাওয়া ঘটনা একদম হুবুহু উপস্থাপন করতো। কিন্তু তায়্যেবার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। পাছে অন্য কেউ ওর দিকে নজর দেয়। কিন্তু তবুও মাহিমের এরকম ইচ্ছে হচ্ছে না যে তায়্যেবার সাথে প্রেম করতেই হবে কিন্তু মনে হচ্ছে ওর সম্পর্কে জানতে হবে। না জানলে কিছু একটা অপূর্ণ থেকে যাবে। মাহিম একটা সিগারেট কিনলো। দোকানে ঝুলিয়ে রাখা গ্যাসলাইট থেকে সিগারেট এ আগুন ধরাতে ধরাতে সামনে চোখ পড়তেই দেখলো তায়্যেবা আসছে। প্রচুর রোদের জন্য এক হাত কপাল এর উপর দিকে রেখে চোখ দুটোকে ছায়া দিয়েছে। মাহিম সিগারেট টা আঙুলের ফাঁকে নিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে বললো "হাই! চিনতে পেরেছেন?"

"মাহিম হক"
"হ্যাঁ। তো আপনি কি এখন লাইব্রেরি তে যাচ্ছেন?"
"হুম"

"ওহ আচ্ছা শু...."
তায়্যেবা কাশতে কাশতে বললো "আপনার কিছু বলার থাকলে লাইব্রেরি তে গিয়ে শুনি? আসলে আমার সিগারেট এর ধোঁয়া সহ্য হয় না। এদিকে তো অনেক পান সিগারেট এর দোকান তাই ধোঁয়া আসছে। আমার দম বন্ধ লাগছে" বলেই সামনে হাঁটতে থাকে। মাহিম তাকিয়ে দেখে ওর সিগারেট থেকেই ধোঁয়া উড়ছে। ছুড়ে ফেলে দেয় সিগারেট টা। আরো দুটো দিয়ে দিতে বলেছিলো দোকানিকে। বিল পে করতে গিয়ে বললো আর সিগারেট নিবে না। তারপর জোরে হেটে তায়্যেবার সাথে গিয়ে লাইব্রেরি তে ঢুকলো। আজকে অন্য ডেস্কে নয় বরং তায়্যেবার পাশেই একটা চেয়ার নিয়ে বসলো। তায়্যেবা মাহিমের দিকে তাকিয়ে বললো "আপনি কি আমাকে কিছু বলবেন?"

"না মানে হ্যাঁ...না..বলবো..কিছু না"
"আপনি বোধহয় ঘাবড়ে যাচ্ছেন। এতো ঘাবড়ানোর কিছু নেই" নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে মাহিমের দিকে এগিয়ে দিলো। মাহিম পানি নিতেই তায়্যেবা উঠে গিয়ে একটা বই নিয়ে আসলো।
"আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে আমি কাল আপনার নাম জানতে চাইলাম আর আপনি বিরক্ত না হয়ে নাম বলে দিলেন। অন্যরা তো রেগে যায়"

"কোনো ভদ্রলোক নাম জিজ্ঞাসা করলে নাম বলাটা ভদ্রতা তাই"
মাহিমের খুব কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না। তায়্যেবা উঠে যাওয়ার সময় জিজ্ঞাসা করলো "আপনি কি চলে যাচ্ছেন?"

"হুম"
"ওকে বাই"

"আল্লাহ্ হাফেজ"
মাহিমের সাথে তায়্যেবার এরকম টুকটাক কথা লাইব্রেরি তে প্রায় হতো। যদিও তায়্যেবা নিজে থেকে কোনো কথা বলতো না কিন্তু মাহিমের প্রশ্নে বিরক্ত হতো না। ধৈর্য্য নিয়ে সবগুলোর উত্তর দিতো। কখনো বই এ মুখ গুজেই উত্তর দিতো। কখনো না তাকিয়েই। তবে মাহিম একটা জিনিস খেয়াল করেছে আর তা হলো ওর চোখ। কথা বলার সময় চোখের ভঙ্গির দিকে তাকালে মনে হয় চোখে যেনো রহস্য খেলছে। আর মায়ার জন্য তো মাহিমের কাছে ও মায়াবতীর।



টুকটাক কথা বলার সাথে সাথে এখন তায়্যেবাকে ফলো করাও মাহিমের প্রতিদিন এর রুটিনে লিখা হয়ে গেছে। তবে তায়্যেবা কখনো এটা খেয়াল করেনি। মাহিম ভাবে কি "মেয়েরে বাবা! মানুষ ফলো করে তা বুঝেই না। অবশ্য না বুঝাই ভালো নয়তো আবার আমার প্রতি একটা খারাপ মনোভাব চলে আসবে। আমার ই বা কি করার আছে? মেয়েটাই তো আমাকে চুম্বকের মতো টানে। মনের কথা বলতেও পারবো না। এখন তো ওকে ভালো করে চিনলাম ও না। আচ্ছা আমি কি ওকে ভালোবাসি? ভালো না বাসলে এমন কেন করি? ভালোবাসা বুঝি এমনি হয়? তবে কাউকে না চিনে কি ভালোবাসা যায়?" মাহিমের কাছে কোনো উত্তর মিলে না। তায়্যেবার বাসাটা চেনা হয়ে গেছে। তবে গেইটের ভিতর তো আর ঢোকা যায় না তাই ঠিক ক'তলায় থাকে তা জানা বাকি।

অন্যদিনের মতো আজকেও মাহিম তায়্যেবাকে ফলো করছে। কিন্তু তায়্যেবা বাসার রাস্তায় যাচ্ছে না। অন্য একটা রাস্তায় যাচ্ছে। কি চিপা চিপা রাস্তা। এরকম রাস্তা দিয়ে ও কোথায় যাচ্ছে? ভাবনায় ফেলে মাহিমকে


কার্টেসি- আহসানা নূর তিথি

No comments

Featured

All Results BD jsc/ssc/hsc with full marks 2018

Get  all Bangladesh  education board  result , Exam Routine, National University  Result , JSC  Result 2018, PSC  result  2018, SSC  Result...

Theme images by loops7. Powered by Blogger.