ইঁচড়েপাকা-ছোট গল্প
ক্লাসে সবার ছোট দুইজনের মধ্যে আমি একজন ছিলাম। বয়সে
আর সাইজে ও ছোট বলে সবাই আদর করতো। কথা আছে না অতিরিক্ত আদরে বানর মাথায়
উঠে বসে! আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
আমাদের এক ইয়াং শিক্ষক ছিলেন,মেধা আর বাচন ভঙ্গি অসাধারণ ছিলো উনার। যার কারণে মেয়েরা খুব সহজে আকৃষ্ট হতো।
আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ছি তখন সাইজে ক্লাস ফাইভের ছেলেদের মতো ছিলাম। স্যার আমাকে খুব স্নেহ করতেন।
সাল ১৯৯৬, আমার ক্লাসের এক ফ্রেন্ড আমাদের এক বছরের জুনিয়র এক মেয়েকে মনে
মনে খুব ভালোবাতো। কিন্তু সে মেয়ের হাউজ টিউটর ছিলেন আমাদের সে শিক্ষক।
সবাই মনে করতো সে মেয়ে স্যারকে ভালোবাসে। স্যারও ভালোবাসেন। সবাই চিন্তা করছে কি করা যায়। কোন সমাধান পাওয়া গেলো না।
বর্ষার সময়,গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আমি স্কুলের সামনে বসে আছি। বাড়ি যাবো
যাবো করে যাওয়া হচ্ছে না। হঠাৎ আমার সে বন্ধু দোকানে এসে বসে বলল,দোস্ত
কিছু কর।
কোন চিন্তা না করে কাজে নেমে পড়লাম। চুপিচুপি মেয়েদের কমন
রুমে গিয়ে শুরু করে দিলাম কাজ। হঠাৎ স্কুলের নাইটগার্ড দেখে ফেলে। তাকে ধমক
দিয়ে চুপ করিয়ে দিলাম।
আমরা ৩ জন মিলে ইটের টুকরা দিয়ে ইচ্ছামত লিখলাম দেয়ালে। আমি একটা কথাই লিখলাম "স্যার হয়ে ছাত্রীর সাথে প্রেম করা মানায় না।"
পরদিন স্কুলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সবাই বলা বলি করছে এই কাজ কে করলো।
কিন্তু ভুল বশত আমরা বের হয়ে চলে আসার সময় আমাদের এক শিক্ষক দেখেছেন।
উনি ক্লাসে এসে বলে গেলেন, বাবারা কে কে করেছো আমি দেখেছি। আমি কাউকে কিছু বলবোনা।কিন্তু সবাই এসে মেয়েদের কমনরুম পরিষ্কার করে দাও।
পর দিন শুক্রবার ছিল বলে অনেক স্টুডেন্টস এসে পরিস্কার করে দিয়ে গেলো।
কিন্তু যারা এই কাজ করেছে কেউ আসেনাই। স্যার অনেক কলাকৌশল অবলম্বন করে এক
জনের কাছ থেকে আসল অপরাধী কে কে জেনে গেছেন।
একজন স্কুল ছেড়ে পালিয়ে
গেলো। আমার কাছে এসে স্যার একটা কথাই বলে গেলেন। বাবা তোমাকে আমি যেমন খুব
স্নেহ করতাম, ঠিক তেমন সময়ে বুঝিয়ে দেবো আমি কতটা কঠোর।
আমাদের সময়
অল্প অল্প নকলের প্রচলন ছিলো। কিন্তু পরীক্ষার সময় স্যার পুরু তিন ঘন্টা
আমার পাশে বসে থাকতেন। বলতে গেলে আমি যেন একটা হলে একাই পরীক্ষা দিলাম। শেষ
পরীক্ষার দিন আমাকে বললো বাবা কেমন হলো পরীক্ষা?
আমিও বলে দিলাম স্যার আল্লাহর রহমতে খুব ভালো হয়েছে।
অবশেষে এটাই বুঝলাম স্যারের সাথে পাকামি করতে নাই। অনেক ভালোবাসি স্যার আপনাকে। অনেক অনেক ভালো থাকুন।
No comments