মায়াবতী- পর্ব ১



 মাহিম দূর থেকে মেয়েটাকে দেখছে। কি পরম যত্নে বই পড়ছে। চোখের পাতাগুলো যেনো নড়ছেই না। শুধু ঠোঁটটা নিঃশব্দে কম্পিত হচ্ছে। মেয়েটাকে প্রায় ই এখানে দেখে। কথা বলার বড্ড ইচ্ছে জাগে কিন্তু সাহস হয় না। আজকে ভাবলো যেভাবেই হোক আজ নাম জানবেই। নিজের ডেস্ক থেকে উঠে মেয়েটার ডেস্কে যেতে গিয়ে একটু থমকে দাঁড়ালো। পুরানো স্মৃতিচারণ করে নিলো। ঐ যে বাসস্ট্যান্ড এ যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে ছিলো। যার চুলগুলো বাতাসে মাঠভরা ধানের মতো ঢেউ খেলে যাচ্ছিলো। আর মেয়েটি আনমনে তা কানের পিছনে আলতো করে গুঁজে রাখছিলো। আহা! কি সৌন্দর্য! যেনো আজীবন অবাক হয়ে উপভোগ করা যায়। কিন্তু কিছু সৌন্দর্য দূর থেকেই উপভোগ করতে হয়, মাহিম এটা বুঝেছিলো যখন সে সুন্দরী নাম বলার পরিবর্তে গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিয়েছিলো। মাহিম গালে হাত বুলাতে বুলাতে ধ্যান ফিরলো। নিজের সাথে নিজেই কথা বললো "দেখ মাহি! সবাই এক না ঠিক আছে? ও এরকম করবে না" পরক্ষণেই আবার এক ভয়ানক পৈশাচিক দিনের কথা মনে পড়ে গেলো। বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে এক মেয়ের নাম জানতে চেয়েছিলো। সেই মেয়ের সন্ত্রাসী বফ তো মেরে নিজের নাম ই ভুলিয়ে দিয়েছিলো। মাহিম ভদ্র ছেলের মতো চুপচাপ নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ স্ট্যাচু থেকে কফিটা হাতে নিয়ে দেখলো ঠান্ডা হয়ে গেছে। এক চুমুকে খেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার মেয়েটি যে ডেস্কে ছিলো সে ডেস্কে তাকাতেই মেজাজ বিগড়ে গেলো। মেয়েটি নেই উল্টো আছে অন্য গ্রহের দুটি এলিয়েন। যাঁরা পাবলিক লাইব্রেরি তে এসে রিডিং রুমের ডেস্কে বসে একটা কোকাকোলা দুটো পাইপ দিয়ে দু'জনে পান করছে। আর একজন আরেকজন এর হাত তো যঙ্গের ধনের মতো ধরেই আছে। "অসহ্যকর" মাহিম বিড়বিড় করতে করতে উঠে গেলো। 

সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে খেলে সন্ধ্যায় বাসায় ঢুকতেই হাঁড়ি পাতিল ওর গায়ের উপর এসে পড়া শুরু হয়েছে। আপাতত সদর দরজার পিছে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করেছে। এ মুহুর্তে একমাত্র ভরসা ইয়ানা। ইয়ানা মাহিমের ছোট বোন। আর ওর উপর যে এখন টনের্ডো বয়ে নিয়ে যাচ্ছে উনি মিসেস শামিমা হক। পেশায় একজন গৃহিনী তবে গুন্ডি গৃহিনী বলাই শ্রেয়। বাসার সবাই তার ভয়ে একদম চুপসে থাকে। সারাদিন বাইরে বাইরে থাকার দরুণ আজ মাহিমের কপালে কি লিখা আছে তা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা বোধহয় জানেন। চোখ বন্ধ করে আল্লাহ্কে স্মরণ করতে করতে চোখ খুলে দেখে ইয়ানা চুপিসাড়ে ঘরে যাওয়ার জন্য ইশারা করছে। ইয়ানা মা এর কাছে গিয়ে বললো
"আচ্ছা মা, মধু কোথায় গো?"

"সর তুই। আগে ঐ বাদর টার ব্যবস্থা করছি"
তিনি যেনো দরজার দিকে তাকাতে না পারে তাই সামনে গিয়ে হাত ধরে আবার বলে " ও মা! ও মা! এলোভেরা কোথায় বলো না!"
তিনি ধমক দিয়ে বললেন "যেখানে সব থাকে ঐখানেই আছে"
ইয়ানা আড়চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো মাহিম নেই। তারপর মা এর দিকে তাকিয়ে থ্যাংকিউ বলে চলে গেলো। ইয়ানা চলে যেতেই তিনি লক্ষ্য করলেন মাহিম নেই। তারপর বিড়বিড় করে বললেন "ও আচ্ছা! ভাই-বোন মিলে এইসব করা হয়েছে না?" তারপর চিল্লানো শুরু করলেন। "ভাই টা যেমন হয়েছে বোন টা ও তেমন হয়েছে। কেউ কারোর থেকে কম না। সারাদিন ঘরের বাইরে থাকা। কি দরকার ছিলো ঘরে আসা.........." রান্না করতে করতে একসময় চুপ হয়ে গেলেন।
ইয়ানা পা টিপে টিপে মাহিমের ঘরে গেলো। তারপর ফিসফিস করে বললো "সাইক্লোন থেমে গেছে" মাহিম ক্যাটবেরি টা এগিয়ে দিয়ে বললো "নে তোর ট্রিট" ইয়ানা ক্যাটবেরি টা নিয়ে খুশি হয়ে বললো "ভাইয়া তুই এত্তোগুলা ভালো"
মাহিম, ইয়ানা, শামিমা হক আর রিয়াজুল হক এই চারজন এর পরিবার। রিয়াজুল হক একজন সরকারি চাকুরিজীবী। ইয়ানা এইবার দশম শ্রেণিতে উঠলো। আর মাহিম অনার্স শেষ করে মাস্টার্স পড়ছে। অন্য পাঁচ দশটা ফ্যামিলির মতো ভাই বোন খুনসুটি লেগে থাকে না। একদম ই যে করে না তা না। কিন্তু তা খুব বেশি না। সবসময় একজন অন্য জনের পক্ষেই থাকে। যেনো দুটো মানুষের একটাই আত্মা। ঠিক এতোটাই ভালোবাসা মাহিম আর ইয়ানার মাঝে।
খুব ভোরে আর সন্ধে নামার ঠিক আগ মূহূর্তে মাহিম ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ থেকে। তখন আকাশের রং টা একদম অন্যরকম থাকে। পূর্ব আকাশে সূর্য যখন এসে উঁকি দেয় তখন সবার আগে মাহিম ওয়েলকাম করে। তেমনি পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার সময় গুড বাই জানাতেও একদিন ও ভুল হয় না। আজ সূর্য ডোবার ও অনেকক্ষণ পর মাহিম ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। মৃদু বাতাস বইছে। বাতাসে যেনো একটা মিষ্টি গন্ধ আছে। কেমন যেনো মাতাল করা গন্ধ। মাহিম সেটা খুব করে উপভোগ করছে। চোখের সামনে একটা মুখ ভাসছে যার শুধু ঠোঁট কাঁপে চোখগুলো একদম নড়েই না। "আচ্ছা মেয়েটা কি চোখে কাজল দিয়েছিলো? নয়তো ওই চোখদুটো আমাকে এতো টানছিলো কেন? শুনেছি কিছু মেয়ে নাকি চোখে কাজল নয় বরং কাজল দিয়ে চোখে মায়া এঁকে নেয়। সেই মায়াজালে কোনো পুরুষ আটকে যেতে বাধ্য। আচ্ছা ওর ঠোঁটের ঐ লিপস্টিক এর রং কি ছিলো? অন্যরকম একটা রং। ঠিক এটা কোন রং বুঝছি না। মিষ্টি কালার? না তা তো অনেকটা গোলাপির মতো! ওটা তো মানুষের গায়ের রং এর মতো কিন্তু খানিকটা অন্যরকম ছিলো। বড্ড মানিয়েছিলো কিন্তু। সব মেয়েকেই কি ঐ লিপস্টিকে এমন মায়াবতী লাগবে?" মাহিম আনমনে হাজার ও কথা বলে যাচ্ছে। হাজার টা প্রশ্ন খেলছে মাথায়। কিন্তু উত্তর মিলছে না একটার ও। হঠাত্ মনে হলো ইয়ানার ঘরে গিয়ে ওর লিপস্টিক দেখে নাম জিজ্ঞাসা করলেই তো হলো। পরে আবার ভাবলো ধুর ও লিপস্টিক এর নাম জেনে কি করবে!

মাহিম লাইব্রেরি তে বই পড়তে তেমন আসে না। এখানে যে কফিসপ টা আছে কফিটা দারুণ বানায় আর এই জায়গাটায় বসে থাকতেও অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। তাই প্রতিদিন এসে এক কাপ কফি নিয়ে কবিতার বই উল্টোয়। কবিতা পড়তে ওর ভালোই লাগে। কিন্তু আজকে কফিতেও মন নেই আর কবিতাতেও। আজকে চোখ শুধু সেই মায়াবতী কে খুঁজছে। কিন্তু সে আসছে না। অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে যায় মাহিম। কবিতার বই টা নির্দিষ্ট সেলফে রেখে এসে কফির মগ টা নিয়ে কফিসপ এর দিকে পা বাড়াতেই দেখে মেয়েটি রিডিং রুমে এসে ঢুকলো। মাহিম বিদ্যুতের গতিতে পাশে একটা ডেস্কে গিয়ে বসলো। যেনো মেয়েটাকে আড়চোখে তাকালে সরাসরি দেখা যায়। আজকে একদম সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবে দেখছে। হ্যাঁ মেয়েটার চোখে কাজল টানা। তারচেয়ে বেশি আকর্ষণ করছে চোখের ঐ বড় বড় পাপড়িগুলো। আর আজকে ঠোঁটে একদম হালকা গোলাপি লিপস্টিক দেওয়া। হলুদ রং এর সালোয়ার কামিজ পড়া। সাথে সোনালী রং এর হিজাব। উড়না ও অনেক সুন্দর করে নেওয়া। মাহিম ভাবে একটা মানুষকে এতো সুন্দর কেন হতে হবে? এই যে মেয়েরা ঠোঁটে এতো গাঢ় লিপস্টিক দেয় যে সবার আগে ঠোঁটেই নজর যায় তাদের দিকে তো দ্বিতীয়বার তাকাতে ইচ্ছে করে না। বরং মেজাজ খারাপ হয়। অথচ এই মেয়েটার দিকে আজন্ম তাকিয়ে থাকলেও বোধহয় ক্লান্তি আসবে না। মাহিম খুব করে বুঝতে পেরেছে যদি ওর নাম না জানা হয় তাহলে মাহিমের ঘুম যে হারাম হবে তা শতভাগ নিশ্চিত। আল্লাহ বাচাইও বলে বুকে ফু দিয়ে মেয়েটার ডেস্কের দিকে এগিয়ে যায়। জিজ্ঞাসা করবে কি করবে না এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে ভুগতে চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলে দেয় "আপনার নাম টা জানতে পারি?"


কার্টেসি- আফসানা নূর তিথি

No comments

Featured

All Results BD jsc/ssc/hsc with full marks 2018

Get  all Bangladesh  education board  result , Exam Routine, National University  Result , JSC  Result 2018, PSC  result  2018, SSC  Result...

Theme images by loops7. Powered by Blogger.