মায়াবতী পর্ব-৩
একটা নোংরা গেইট দিয়ে তায়্যেবা ভিতরে ঢুকে গেলো। মাহিম ভাবছে কি আছে এই
গেইটের ভিতর? দেখবে কি? বেশকিছুক্ষণ ভাবে কি করবে? কেউ যদি আবার অন্যকিছু
ভেবে মারধর করে! আশপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। তারপর গেইট হালকা একটু খুলে
উঁকি দিতে না দিতেই তায়্যেবা বের হওয়ার জন্য গেইটে ধাক্কা দেয়। মাহিম নাকে
বেশ ব্যথা পেয়ে একটু সরে আসে। মাহিম কে এ অবস্থায় দেখে তায়্যেবা বলে
"মাফ করবেন। আমি আপনাকে দেখি নি। আপনার কি খুব লেগেছে?"
মায়াবতী-৩ |
নাক লাল হয়ে ফুলে গেছে তবুও মাহিম নাকে হাত বুলাতে বুলাতে বললো "না ঠিক আছে। আমার কিছু হয় নি"
তায়্যেবা আর কথা বাড়ালো না। চলে যাচ্ছিলো হঠাত্ আবার পিছু ফিরে জিজ্ঞাসা করলো "আপনি এখানে কি করছেন?"
মাহিম থতমত খেয়ে যায়। কি উত্তর দিবে? সত্য টা তো বলা যাবেই না। তাহলে কি বলা যায়?
"কি হলো চুপ করে আছেন যে?"
"তার আগে বলুন আপনি এখানে কি করছেন?"
"আসলে এক বুড়িমার কাছে এসেছিলাম। উনি এখন বাসায় নেই"
"বুড়িমা! কে উনি?"
"হবে কেউ। কিন্তু আপনি এখা...."
"পথ ভুলে ঢুকে গেছি। বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না"
"আমার সাথে আসুন"
তায়্যেবা আর মাহিম চুপচাপ হাটছিলো। কিছুদূর যাওয়ার পর মাহিম জিজ্ঞাসা করলো
"আমি যদি আপনার কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি আপনি কি রাগ করবেন?
"ব্যক্তিগত বলতে?"
"এই আপনি কি করেন? বাসায় কে কে আছে এইসব ই"
"আমি কবি নজরুল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছি। পরিবার বলতে মা বাবা আর আমিই"
"বাহ! একমাত্র মেয়ে?"
"হুম"
"তাহলে আপনি তো খুব আদরের"
"হ্যাঁ"
মাহিমের রাগ হচ্ছে মেয়েটা এমন কেন? ওর ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করে না। ও
কি দেখতেই এতো খারাপ? এতো খারাপ হলে তো আর সুহাসিনী, আনিশা, আফরিনদের মতো
সুন্দরী মেয়েরা প্রেম নিবেদন করতো না। আর এই মেয়ে একটু ফিরেও চায় না। শুধু
উত্তর দেয়। এমন হলে তো হবে না। মাহিম বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো "আপনার
আমার ব্যাপারে কিছু জানতে ইচ্ছে হয় না?"
"আপনি একজন মানুষ। আর সম্ভবত একটা ভদ্র পরিবারের ই সন্তান আর আপনার নাম মাহিম। আপাতত হয়তো এতুটুকু পরিচয় ই যথেষ্ট"
"ও"
মাহিমের খুব খারাপ লাগে। ও ভাবে "এই মেয়ের ভিতর একটা মেয়েলি বৈশিষ্ট্য কম
আছে। না না কম না একদম ই নেই। আর তা হলো কোনো ছেলের তার প্রতি আকর্ষণ বুঝা।
অন্য মেয়েরা তো তিনলাইন বেশি বুঝে আর এই মেয়ে। ধ্যাত ভাল্লাগে না। কিন্তু
আমি হাল ছাড়বো না। দরকার হলে এটা অনুভব করা শিখিয়ে নিবো। আচ্ছা আরেকটা কারণ
ও তো হতে পারে। মেয়েটার বিশেষ কেউ আছে যার জন্য আমার অনুভূতি বুঝেও না
বোঝার ভান করছে। হতেই তো পারে তাই না?"
মাহিম বিড়বিড় করে "কেন থাকবে?
মেয়ে দেখলেই ছেলেরা প্রেম নিবেদন করতে ঝাপিয়ে পড়ে। মেরে ঠ্যাং ভেঙে রাখতে
হবে। আমার মায়াবতীর দিকে চোখ। তার জানা উচিত ছিলো মায়াবতীর সাথে আমার
একদিন দেখা হবে"
তায়্যেবা খেয়াল করলো মাহিম বিড়বিড় করছে। তায়্যেবা
এই ছেলের হাবভাব বুঝে না। চায় টা কি? এতো কেনো আগ্রহ ওর ব্যাপারে জানার?
অদ্ভুত ছেলে একটা।
"জানিস অনি আমি যেই পাবলিক লাইব্রেরি টা
তে বই পড়তে যাই ঐখানে একটা ছেলে আসে। ছেলেটা টা অন্যরকম। দেখতে খুব সুন্দর
জানিস। খুব ফর্সা ও না আবার শ্যামলা ও না। মাঝামাঝি, উজ্জ্বল শ্যামলা যাকে
বলে। আর কথার বলার ধরণ ও কত সুন্দর। একদম মন ছুঁয়ে যায়"
"এহেম এহেম! আমাদের তাযু রাণী দেখি প্রেমে পড়ে গেছে"
"নারে ওসব আমার দ্বারা হবে না। তুই তো আব্বুকে চিনিস। এরকম কিছু করলে আমাকে টুকরো টুকরো করতেও দ্বিধা করবে না।"
"আসলেই। কিন্তু যাই বলিস আঙ্কেল কিন্তু অন্যান্য দিক দিয়ে অনেক ভালো। তবেএএএএ"
"তবে?"
"ছেলেটার নাম কিরে?"
"মাহিম"
"বাহ সুন্দর নাম তো! তো কি করে রে?"
তায়্যেবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো "তা জিজ্ঞাসা করিনি। উনি হয়তো আমাকে
পছন্দ করে তাই আমি বেশি একটা কথা বলি না। আবার একদম এড়িয়েও যেতে পারি না।
প্রতিবার ভাবি কোনো প্রশ্ন করলে কড়া করে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিবো কিন্তু
পারি না। কেমন যেনো বাধ্য মেয়ের মতো সব বলে দেই। তার প্রতি কোথায় যেনো একটা
অদ্ভুত আকর্ষণ কাজ করে রে"
"দেখ যদি সম্পর্ক না ই করার থাকে তাহলে তাঁকে আর পাত্তা দিস না। ধীরে ধীরে আকর্ষণ আরো বাড়ে। পরে আরো কষ্ট পাবে। তোর ও খারাপ লাগবে"
"হুম! চল ক্লাস শুরু হবে"
অনিন্দিতা তায়্যেবার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী। বোনের চেয়েও বেশি। ওদের
পরিচয় টা কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে কিন্তু ওদের মানিকজোড় দেখলে মনে হয়
যেনো যুগ যুগের বন্ধুত্ব। হবেই না কেন? দু'জন কে এতোটা বুঝে! মুখে বলতেই হয়
না। চোখ মুখ দেখলেই মনের সব কথা বুঝা যায়। যেকোনো পরিস্থিতিতেই একজন
অন্যজনের হাত টা ধরে আশ্বস্ত করে বলে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস।
ইয়ানা লক্ষ্য করছে ওর ভাই এর কিছু একটা হয়েছে। অন্যমনস্ক থাকে। আগের মতো তেমন দুর্দান্ত ভাব টা নেই। সারাদিন কি যেনো ভাবে।
"ভাইয়া তোর কি কিছু হয়েছে? আমাকে বল। তুই তো আমার কাছে আগে কিছু লুকাতি না"
মাহিম ভাবলো ইয়ানাকে বলে কিছুটা হালকা হওয়া যাবে। কেমন যেনো বুকের ভিতর একটা ভারি পাথর চাপা লাগছে।
"আগে বল আর কাউকে বলবি না। প্রমিজ?"
"ওকে প্রমিজ, বল"
"লাইব্রেরি তে একটা মেয়েকে দেখি প্রতিদিন। মেয়েটা অন্য পাঁচ দশটা মেয়ের
থেকে আলাদা না কিন্তু কি যেনো আছে ওর ভিতর। ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো
লাগে। ও কথা বললে সেগুলো বারবার রিপিট করলেও মনে হয় অতৃপ্তি আসবে না।
কিন্তু মেয়েটা কেমন যেনো। আমি প্রশ্ন করলে বিরক্ত হয় না অথচ নিজে কিছু কখনো
জিজ্ঞাসা ই করে না"
"আচ্ছা বুঝলাম। তার মানে আমার ভাবীর দেখা মিলেছে। তাই ভাইটা এতো উদাসীন হয়েছে"
"কিন্তু আমিতো জানিই না ওর কাউকে পছন্দ আছে নাকি?"
"আচ্ছা চল আমি তোকে সাহায্য করবো কিন্তু এরজন্য আমি কি পাবো বল?"
"উমমম একটা গাউন দেওয়া যায়"
"ওয়াও। তুই আসলেও বেস্ট ব্রাদার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড"
মাহিম ইয়ানার নাকি টিপে দিয়ে বললো "তুই ও বেস্ট সিস্টার"
"জানি জানি"
"সিস্টার মানে কিন্তু নার্স বুঝাইছি"
"তবে রে দাঁড়া...."
আবার শুরু হলো ভাই-বোনের টম এন্ড জেরি। যখন দুজন ই হাঁপিয়ে গেছে তখন ইয়ানা মেঝেতেই বসে পড়লো। মাহিম হাত ধরে টেনে তুলে খাটে বসালো।
"আচ্ছা শোন কাল তুই লাইব্রেরি তে যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যাইস। ভাবীকে দেখে তারপর দেখি কিভাবে কি করতে হবে"
"ঠিক আছে। এখন যা পড়তে বস"
"এই তায়্যেবা, এই!"
"হ্যাঁ বল"
"দেখ তোর কার্বন কপি"
"দেখছি। কিন্তু তুই কি করে জানলি আজ আমি এই জামাটা ই পড়বো।"
"মনের টান বাবু"
"হুম বুঝলাম"
"আচ্ছা তুই কি লাইব্রেরি তে যাচ্ছিস?"
"হুম"
"চল আমিও যাবো"
"তুই? তুই তো বই টই পড়িস না"
"আমি একটু উনারে দেখতে যাবো"
"কারে?"
অনিন্দিতা দুষ্টু চাহনি দিয়ে চোখের ইশারা করলো। তায়্যেবা বুঝলো মাহিমের
কথা বলছে। তায়্যেবা রাগী চোখে তাকাতেই অনিন্দিতা বললো "চল তো"
তায়্যেবা আর অনিন্দিতা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে। মাহিমের আসার নাম ই নেই। তায়্যেবা বললো "অনি, কমলাকান্তের দপ্তর বইটা একটু এনে দিবি?"
অনিন্দিতা বই আনতে উঠে যেতেই মাহিম আর ইয়ানা ঢোকে। তায়্যেবা কি যেনো
ভাবছিলো তাই খেয়াল করে নি। মাহিম আজকে পিছনের দিকে একটা দূরের ডেস্কে বসে
ইয়ানাকে বললো "ঐ যে বাসন্তী রং এর জামা পড়া মেয়েটা। একদম সামনের ডেস্কে বসে
আছে সে ই"
ইয়ানা একবার পিছে ফিরে দেখলো তারপর মাহিমকে বললো "ওকে তাইলে খেলা শুরু করি"
"ঐ বই পাই না"
"তুই পাবি ও না"
"বস আমি নিয়ে আসছি"
তায়্যেবা উঠে যায়। অনিন্দিতা বসে সামনে রাখা একটা ম্যাগাজিন দেখছিলো। এমন
সময় পিছন থেকে ইয়ানা এসে বললো "হাই আপু। আমি কি একটু বসতে পারি?"
কার্টেসি- আফসানা নূর তিথি
No comments