বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো এতো ডিপার্টমেন্ট না খুলে 'ডিপার্টমেন্ট অব বিসিএস' খুললেই তো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো এতো ডিপার্টমেন্ট না খুলে 'ডিপার্টমেন্ট অব বিসিএস' খুললেই তো হয়। দশ সেমিস্টারে এমপিথ্রি, প্রফেসর্স কিংবা ওরাকল এর সিরিজ গুলো সিলেবাসে রাখা চলে। আমরা সবাই 'বিসিএস বিভাগে' পড়ে ক্যাডার হয়ে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করতাম ।



উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো একটা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া, সে বিষয়ে জ্ঞান সৃষ্টি, জ্ঞান উন্নয়ন কিংবা জ্ঞানের সম্প্রসারণ । সুদূর দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে সেই জায়গাটা দখল করে নিয়েছে নীলক্ষেতের প্রফেসর্স বা ওরাকল সিরিজ । ক্লাস এর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ক্লাস এ লেকচার না শুনে, ক্লাস এ মনোযোগ না দিয়ে এমপি থ্রি পড়ে, অনার্সে ও পড়ে, মাস্টার্সে ও পড়ে, আবার পড়াশুনা শেষ করে পাঁচ বছর সেই একই বইগুলো পড়ে যা কিনা দশম শ্রেণীর আগেই শেষ করার কথা । ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়ে ক্লাস এ বসে বসে প্রফেসর্স সিরিজ পড়ে কেবল মেজিস্ট্রেট হয়ে ভ্রাহ্মমাণ আদালত পরিচালনা করবে এই স্বপ্নে । ৬ বছর এমবিবিএস পড়ে ফরেন ক্যাডার হয়েছে দেখে যে বাহবা দিচ্ছেন, উনি তো আমাদের চিকিৎসা করবেন না কিন্তু একই পজিশন এর জন্য কত ছাত্রছাত্রী যে মেডিকেল এর বই বাদ দিয়ে এমপিথ্রি পড়ে আমাদের চিকিৎসা করবেন সেটা ভেবেছেন কি?? ছাত্রছাত্রীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, সমস্যা ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ।



প্রিলিমিনারি পরীক্ষার উদ্দেশ্য কী, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য কোন দক্ষতা গুলো দরকার সেটা পিএসসি কে নতুন করে ভাবতে হবে । এই পরীক্ষা এমন ভাবে সাজানো দরকার যাতে করে বাংলাদেশের লাখ লাখ তরুণের দেশ ও জাতিকে দেয়ার মতো জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ১২ টি বছর শুধুমাত্র ঐ তথাকথিত সিরিজ পড়ে কাটাতে না হয়ে । এখানে শুধু এনালিটিক্যাল স্কিল কিংবা মানসিক দক্ষতা যাচাই করা যেতে পারে; জিম্যাট, জি আর ই অথবা আইবিএ এর পরীক্ষার মতো । কেউ এই পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেই লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী ৪-৫ মাস পড়বে। এতে স্ব স্ব বিষয়ের প্রতি মনোযোগ বাড়বে, বাড়বে ছাত্রছাত্রীদের বহুমুখীতা, সৃজনশীলতা আর উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা ।



নিজেদের প্রচারের জন্য আমাদের গণমাধ্যম সুযোগ বুঝে বিসিএস কে খবরের উপজীব্য বানিয়েছে । সার্কুলার হবে থেকে শুরু করে গেজেট পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ দিন একই বিসিএস নিয়ে নিউজ হয়। ছাত্রছাত্রীরা আর অভিভাবকরা ভাবছেন চারদিকে শুধু বিসিএস আর বিসিএস, প্রতি মাসেই শত শত সন্তান প্রশাসন আর পুলিশ ক্যাডারে ঢুকছে । ছোট বেলা থেকে বাবা মা যে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন দেখতো তারাও এখন ছেলে মেয়েকে এসপির চেয়ারে দেখার স্বপ্ন দেখে ।

ত্রুটিপূর্ণ বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি আর বিসিএস হুজুগ দেশ ও জাতির জন্য যে অশনি সংকেত সেটা আমাদের নীতি নির্ধারকরা বুঝতে না পারলে দেশের উচ্চশিক্ষায় শুধু ধস ই নামবেনা বিশ্ব রেঙ্কিং এ আমাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কে দূরবীন দিয়ে ও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কয়জন ক্যাডার হলো সেই রেঙ্কিং দেখে আত্মতৃপ্তিতে ভুগবে ছাত্রছাত্রীরা ।
প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে তার নিজস্ব সাবজেক্ট ভালোভাবে পড়তে দিন, বিসিএস এর বাছাই পদ্ধতি পরিবর্তন করুন যাতে কাউকে এমপিথ্রি মুখী হতে না হয় ।



আমার এই লেখা বিসিএস এর বিরুদ্ধে না, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার কেন সাধারণ ক্যাডারে আসলো সে জন্য ও না । আমি সেই পরীক্ষা পদ্ধতির বিরুদ্ধে যা সবাইকে স্ব স্ব বিষয়ে অমনোযোগী করে কেবল নীলক্ষেতের তথাকথিত সিরিজ পড়ে জীবনের মূল্যবান ১২ টি বছর নষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করে ।



- শেখ ফরিদ, সোশ্যাল ইনভেস্টিগেটর, অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ প্রোগ্রাম, ব্র্যাক । 

No comments

Featured

All Results BD jsc/ssc/hsc with full marks 2018

Get  all Bangladesh  education board  result , Exam Routine, National University  Result , JSC  Result 2018, PSC  result  2018, SSC  Result...

Theme images by loops7. Powered by Blogger.