নিষিদ্ধ ওষুধ বাজারজাত করছে স্কয়ার ফার্মা

 নিষিদ্ধ ওষুধ বাজারজাত করছে স্কয়ার ফার্মা

শিশুদের সর্দি কিংবা কাশিতে স্কয়ার ফার্মার টুসকা এবং অফকফ সিরাপ ব্যাপক ব্যবহার হতো। আর বড়দের জন্য ফেক্সো প্লাস ট্যাবলেট ব্যবহার হতো। এসব ওষুধ তৈরিতে ব্যবহƒত সিউডোফেড্রিন ইয়াবা বা নেশাজাতীয় ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়। এ কারণে সরকার গত বছরের শুরুতে এসব ওষুধের রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করে। কিন্তু বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে স্কয়ার ফার্মার এসব নিষিদ্ধ ওষুধ। এদিকে একাধিকবার কারণ দর্শানো নোটিশ দিলেও মেসার্স স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস্ লি.-এর রেজিস্ট্রেশন বাতিলকৃত সিউডোফেড্রিনযুক্ত ওষুধ এখনও বাজারজাত করায় ওষুধ প্রশাসন গত জানুয়ারি মাসে স্কয়ার ফার্মাকে সতর্ক করে। গত ১০ জানুয়ারি পরিচালক গোলাম কিবরিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নির্দেশনা স্বত্তেও দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করায় প্রতিষ্ঠানটিকে সতর্ক করা হয়। এর আগে রেজিস্ট্রেশন বাতিলকৃত সিউডোফেড্রিনযুক্ত ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরায় একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। কিন্তু কারণ দর্শানোর জবাবের সাথে ওষুধ প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের তথ্যের মিল না থাকায় স্কয়ার ফার্মাকে সতর্ক করা হয়। দেশের সর্ববৃহৎ ওষুধের বাজার পুরান ঢাকার মিটফোর্ড, বাবুবাজার ও ইসলামপুর। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টুসকা ও অফকফ সিরাপ বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে। শুধু পুরান ঢাকাই নয়। রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলির ফার্মেসী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের ফার্মেসীতেও বিক্রি হচ্ছে এসব নিষিদ্ধ ওষুধ। অফকফ সিরাপের প্যাকেটের গায়ে মেয়াদ ২০১৯ সালের এপ্রিল ও টুসকা ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত লেখা রয়েছে। বিক্রেতারা জানান, এসব ওষুধের মেয়াদ যতোদিন আছে, ততোদিন বাজারে পাওয়া যাবে। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর বলছে, নিষিদ্ধ ওষুধ বাজারে পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিউডোফেড্রিনযুক্ত ৯৭টি প্রতিষ্ঠানের ১১টি জেনেরিক ও ২০১টি ব্যান্ডের ওষুধ চলতি বছরের ৫ ফেব্রæয়ারি ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটির টেকনিক্যাল সাব কমিটির সভায় এসব ওষুধ বাতিলের সুপারিশ করে। পরে ২২ ফেব্রæয়ারি ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ২৪৭তম সভায় এসব ওষুধ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত হওয়ার এক মাস পর অর্থাৎ ২০ মার্চ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পক্ষ থেকে ওষুধগুলো উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধে নোটিশ জারি করে। আর এ সময়ের মধ্যে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যাদের কাছে কাঁচামাল মজুদ ছিল, তারা দ্রæত উৎপাদন করে বাজারে ছেড়ে দেয়।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যেসব ওষুধ বাতিল করা হয়েছে সেগুলোর জেনেরিক নাম হচ্ছে সিউডোফেড্রিন ৬০ এমজি ট্যাবলেট, সিউডোফেড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড পেলেটস, সিউডোফেড্রিন ৬০ এমজি ও ট্রিপ্রোলিডিন ২ দশমিক ৫ এমজি ট্যাবলেট, ফেক্সোফিনাডিন ৬০ এমজি ও সিউডোফেড্রিন ১২০ এমজি ইআর ট্যাবলেট, ফেক্সোফিনাডিন ৬০ এমজি ও সিউডোফেড্রিন ১২০ এমজি ট্যাবলেট, লোরাটাডিন ৫ এমজি ও সিউডোফেড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড ১২০ এমজি ট্যাবলেট, লোরাটাডিন ১০ এমজি ও সিউডোফেড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড ২৪০ এমজি ট্যাবলেট, ডেসলোরাটাডিন ২ দশমিক ৫ এমজি ও সিউডোফেড্রিন ১২০ এমজি ট্যাবলেট, গুয়াইফিনেসিন ১০০ এমজি ও ৩০ এমজি এবং ট্রিপ্রোলিডিন ১ দশমিক ২৫ এমজি সিরাপ, ডেক্সট্রোমেথোরফেন ১০ এমজি ও সিউডোফেড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড ৩০ এমজি এবং ট্রিপ্রোলিডিন হাইড্রোক্লোরাইড ১ দশমিক ২৫ মিলিগ্রাম সিরাপ।
ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির বৈঠকে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘গত বছরের ৭ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়Ñ সিউডোফেড্রিন ব্যবহারে ইয়াবা বা অন্য কোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য তৈরি করা সম্ভব কীনা? সে বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, ফার্মেসী ও ফার্মাকোলোজি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. ইসমাইল খানকে আহবায়ক করে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি মতামত দেন যে, সিউডোফেড্রিন ব্যবহার করে তৈরিকৃত ওষুধ থেকে আলাদা করা যায়। ফিক্সড্রোজ কমবিনেশন থেকেও সিউডোফেড্রিন আলাদা করা যায়। এটি থেকে মেথামফিটামিন তৈরি করা যায়, যা ইয়াবা তৈরির সক্রিয় উপাদান। সিউডোফেড্রিন ব্যবহার করে ইয়াবা নামক নেশাজাতীয় ওষুধ তৈরি করা সম্ভব বলে তারা মতামত দেন। ওই মতামতের ভিত্তিতে টেকনিক্যাল সাব কমিটি সিউডোফেড্রিন আমদানি বন্ধের উদ্যোগ নেয়। সিউডোফেড্রিনযুক্ত সব ধরণের ওষুধ উৎপাদন বন্ধেরও সুপারিশ করা হয়।
ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সিউডোফেড্রিনযুক্ত সব ধরণের ওষুধের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা, তিন মাসের মধ্যে বাজার থেকে এই ওষুধ প্রত্যাহার ও ধ্বংস করে অধিদফতরকে অবহিত করা, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে কাষ্টমস কর্তৃপক্ষকে সিউডোফেড্রিন ছাড় না দিতে চিঠি দেয়া এবং সিউডোফেড্রিনের অপব্যবহার রোধে তদারকির জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে ওষুধ প্রশাসনের পরিচালক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক, ওষুধ শিল্প সমিতির প্রতিনিধি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদের ডিনের সমন্বয়ে কমিটি করা হয়। কমিটির সদস্যরা মজুদকৃত সিউডোফেড্রিনের পরিমাণ নির্ণয় ও সঠিক ব্যবহার মনিটরিং করার নির্দেশ দেয়।
বাবুবাজার এলাকার এক ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, সিউডোফেড্রিনযুক্ত ওষুধ নিষিদ্ধের আগে তিনি ১৩ লাখ টাকার ওষুধ কিনেছিলেন। ওষুধগুলোর রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে তিনি তা দ্রæত বিক্রি করে দেন। এতে তিনি কোনো মতে চালান নিয়ে ঘরে ফেরেন। তবে অনেক ব্যবসায়ীর কাছে এখনো এসব ওষুধ মজুদ রয়েছে। কোম্পানী কিংবা ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব ওষুধ বাজার থেকে তুলে নেয়ার তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ওষুধ প্রশাসন থেকে শুধু পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় সারা হয়। সরবরাহকৃত এসব ওষুদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাজারে বিক্রি হবে বলে ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন।
সার্বিক বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রুহুল আমিন বলেন, ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিউডোফেড্রিনযুক্ত সব ধরণের ওষুধ উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো ফার্মেসী কিংবা কোম্পানীর কাছে নিষিদ্ধ এসব ওষুধ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

No comments

Featured

All Results BD jsc/ssc/hsc with full marks 2018

Get  all Bangladesh  education board  result , Exam Routine, National University  Result , JSC  Result 2018, PSC  result  2018, SSC  Result...

Theme images by loops7. Powered by Blogger.